অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত

সকাল ৯ টা, এইরে! মা এইবার ঠিক বকবে। রীতিমতো বিছানা থেকে উঠে হাতমুখ ধুয়ে বসে পড়লাম। কিন্তু এবার কি করবো! কোন কাজ নেই। রাজ্য সরকার আবার স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার ঘোষণা করেছেন। যদিও আমি খুব লেখাপড়া করা ছাত্র নয় কিন্তু টানা এক-দু বছর বাড়িতে থাকার পর ক্লাস রুমে বসে ক্লাস করতে ভালোই লাগছিল, কিন্তু সেটাও বন্ধ হয়ে গেল। কোন কাজ নেই তাই ভাবলাম ছাদে যাই, শীতের সকালে রৌদ্রের তাপ একটু গায়ে লাগলে মন্দ হবে না। মোবাইলটা নিয়ে যায়নি তাই ছাদে গিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তারপরের দশ মিনিট যেন নিজের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছিলাম। না, আমাদের রাস্তাটা কোন টাইম মেশিন না, কিন্তু তার একটা অন্যরূপ হতে পারে। সবসময়ের মতোই পথিকদের ভিড়, বাঁশি বাজিয়ে যানবাহনের চলাচল, এসবই ছিল। কিন্তু হঠাৎ চোখ পরল একটা ছোট্ট বাচ্চার দিকে। সে একটি পুতুল নিয়ে খেলছিল। মনে মনে ভাবলাম আমিও হয়তো ছোটবেলায় এমনই পুতুল নিয়ে খেলা করতাম। তারপর নজর পড়ল তার পাশ দিয়ে চলে যাওয়া অন্য একটা বাচ্চার দিকে। মনে হয় পঞ্চম বা ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে। বাচ্চাটির ব্যাগটা বাচ্চাটির থেকে বেশি ওজনের মনে হচ্ছিল, যেমনটি ছোটবেলায় আমিও বয়ে নিয়ে যেতাম। তারপর চোখ পরল রাস্তা দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাওয়া একটা ছেলের উপর, মনে হয় টিউশন পড়ে বাড়ি ফিরছে। এখন সকাল ৮ টা, ৯ টায় উঠলেও এক সময় আমিও ভোর ৫টায় উঠে প্রস্তুত হয়ে এই কনকনে ঠান্ডাতে সাইকেল নিয়ে পড়তে যেতাম। তারপর খুঁজতে লাগলাম এর থেকে বড় আর কে আসছে, বিষয়টা তখন খুব মজাদার লাগছিল। কিন্তু কই আর তো কাউকে দেখছি না। হঠাৎ উপলব্ধি হলো, আরে হ্যাঁ, আমি আছি তো ওর থেকে বড়ো আর বাকিদের থেকে ছোটো। অতীত নিয়ে ভাবতে ভাবতে, বর্তমানের কথা ভুলে গিয়েছি। অন্যদের নিয়ে ভাবতে ভাবতে, নিজের কথা ভুলে গিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে বেশি সময় থাকতে পারলাম না, কারণ নিজেকে নিয়ে ভাবার অভ্যাস নেই। চোখে পড়ল দুজন অফিস যাওয়া কর্মচারীর থেকে। তাদের মধ্যে যেন নিজেকে দেখছিলাম। হঠাৎ কারোর হাসির আওয়াজ কানে ভেসে এলো। একজন বৃদ্ধ তার দুই নাতির সঙ্গে কি যেন বলছেন আর হাসছেন। হতে পারে কোনো রূপকথার গল্প অথবা তাঁর নিজেরই কোন অভিজ্ঞতার গল্প। এদের মধ্যে যেন নিজের ভবিষ্যৎ দেখছিলাম। হয়তো আমিও অফিস যাব, হয়তো আমিও বৃদ্ধ বয়সে আমার নাতির সাথে গল্প করবো। হঠাৎ দেখি মা ডাকছে, অতীত ও ভবিষ্যতের মায়াজাল থেকে বেরিয়ে এসছি। এখন আবার ফিরে যেতে হবে সেই সংগ্রাম-ময় বর্তমানে।